স্পেশাল রিপোর্ট ওয়েব ডেস্ক, বৈদিক প্ল্যানেটোরিয়াম মন্দির। পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায় অবস্থিত এই মন্দিরটির বিশ্বের বৃহত্তম হিন্দু মন্দির। ভবিষ্যতে মন্দিরের কাজ সম্পূর্ণ হলে বিশ্বের বৃহত্তম গম্বুজে ও ধর্মীয় স্তম্ভে পরিণত হবে। যা হিন্দুত্বকে এক মহান জায়গায় নিয়ে যাবে। এই বিশাল মন্দির তৈরীর উদ্যোগ নিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অফ কৃষ্ণ কনসায়নেস বা ইসকন। দেশ ও বিদেশের বহু কৃষ্ণ ভক্ত, প্রতিষ্ঠানগুলি এই মন্দির তৈরিতে দান করেছে। দীর্ঘদিন ধরে এই মন্দির তৈরি হচ্ছে। এই সুবিশাল মন্দির তৈরিতে এখনো পর্যন্ত কতই বা খরচ হল ? মন্দিরের ভিতরে কি কি তৈরি হচ্ছে ? মন্দিরের স্থাপত্য শিল্প নিয়ে? আর এই মন্দিরের গুরুত্ব বা কতটা ? আসুন জানা যাক।
নদীয়া জেলার মায়াপুরে অবস্থিত বৈদিক প্ল্যানেটোরিয়াম মন্দিরটি ২রা মার্চ, নরসিংহ ভগবান স্থাপনের মধ্যে দিয়ে উদ্বোধন করা হয় । বৈদিক রীতি অনুযায়ী নরসিংহদেবের প্রতিষ্ঠা হয়। এই মন্দির তৈরিতে প্রায় ১০০ কোটির বেশি টাকার খরচ হয়েছে। এমনকি এই মন্দিরে ১০ হাজার ভক্ত একসাথে পার্থনা করতে পারবে।
মহাপ্রভু কৃষ্ণের প্রার্থনা, বৈদিক সংস্কৃতি, জ্ঞান বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়ে, আচার্য মহাপ্রভুর ইচ্ছা পূরণের উদ্দেশ্যেই এই মন্দির গঠন করা হচ্ছে। কিন্তু সব থেকে বড় বিষয় এই মন্দিরে সকল ধর্মের মানুষই প্রবেশ করতে পারবে।
বৈদিক প্ল্যানেটোরিয়াম মন্দিরটি খুবই আকর্ষণীয়। আধুনিক প্রাসাদের মতো করে তৈরি করা হচ্ছে এই মন্দির। আসুন জেনে নিই এর গঠন ও স্থাপত্য রীতি নিয়ে। বিখ্যাত বৈদিক বৈজ্ঞানিক রীতি ও শ্রীমদ্ভগবদ অনুযায়ী , আলফ্রেড ফের্ডোর তত্ত্বাবধানে মন্দিরটি নির্মাণ হচ্ছে। মন্দিরের মেঝে এক লক্ষ বর্গফুট জুড়ে রয়েছে। মাথা গম্বুজ আকার বিশিষ্ট। ছাদ থেকে ঝুলছে কয়েক কোটি টাকার বিশাল ঝাড়বাতি। যা অত্যন্ত সুন্দর।
পুরো মন্দিরটি ২. ৫ একর জমির উপর গড়ে উঠেছে। ভিয়েতনাম ও পশ্চিমী দেশ থেকে আমদানি করা মার্বেলের ওপর তৈরি হচ্ছে এই মন্দির।
আসুন দেখেনি আড়াই একর জমির ওপর অবস্থিত এই বৈদিক মন্দিরের কি কি রয়েছে। আশ্চর্যের কথা শোনা যায় শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর প্রধান সেবক শীলা প্রভু উপাধ্যায় প্ল্যানেটোরিয়াম মন্দিরটি বানানোর জন্য নিজের চোখের জল দান করেন। এই প্লানেটরিয়ামে ৭০ টির বেশি হল ঘর রয়েছে। পাঁচটি রান্নাঘরে উৎসবের সময় মহাপ্রভুর ভোগ রান্না করা হবে।
১০০০০ বর্গ কিলোমিটার এই তিনটি আলাদা ঘর বানানো হয়েছে মহাপ্রভুর জামাকাপড় সেলাই করা, জরির কাজ করা ও রাখার জন্য। পঞ্চতত্ত্ব, রাধা মাধবের অলংকার রাখার জন্য তিনটি আলাদা ঘর বানানো হয়েছে। উৎসবের সময় ফুলের সাজে মন্দির সাজানোর জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা রয়েছে।
এই বড় মিটিংরুম মন্দিরের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য । মন্দির প্রাঙ্গণের পশ্চিম দিকে প্ল্যানেটোরিয়াম আর পূর্বদিকে নরসিংহ মন্দির সুন্দরভাবে বানানো হয়েছে।
মন্দিরের ভেতরে গুরু পরম্পরা, পঞ্চতত্ত্ব, রাধা মাধব আলাদা আলাদা কোঠরে সাজানো থাকবে। মন্দিরের নীচের তলায় বড় বুক স্টল ও মার্কেট হবে। যেখানে ভক্তরা শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর বিভিন্ন বই এবং জিনিসপত্র কিনতে পারবেন।
মন্দিরের এই তিনটি তলা নিয়ে মিউজিয়াম করা হবে, যেখানে পৃথিবীতে চৈতন্যদেবের আগমন ও তার বিভিন্ন বাণী, বই এবং মতামত মিউজিয়ামে যত্ন সহকারে তুলে ধরা হবে।
সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় মন্দিরের প্রবেশদ্বারে জয় ও বিজয় ৮০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট দুই দ্বারা রক্ষী আপনাদের স্বাগত জানাবে। মন্দিরের ঘরের কাজ সম্পন্ন হলেও এখনো পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে তৈরি হতে কিছু বছর সময় লাগবে।
আন্তর্জাতিক স্তরে আকর্ষণ করছে মায়াপুর ইসকনের বৈদিক প্ল্যানেটোরিয়াম মন্দিরটি । এই প্ল্যানেটোরিয়াম মন্দির উদ্বোধনের দিন প্রায় ১০ লাখের বেশি বিদেশি পর্যটক এখানে এসেছে। মন্দিরটি শুধু হিন্দুত্ববাদী নয় দেশের পর্যটন এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে সাহায্য করবে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই মায়াপুরকে হেরিটেজ সিটির খেতাব দিয়েছে। কারণ প্রতিবছর কয়েক লক্ষাধিক দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরের মানুষ এখানে এসে ভগবানের প্রার্থনায় মেতে ওঠে। আপনারাও শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর এই বিশাল মন্দির ঘুরে আসতে পারেন।