স্পেশাল রিপোর্ট ওয়েব ডেক্স, গ্রামীণ মহিলাদের মধ্যে ঋণ নেওয়ার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন সার্ভের রিপোর্ট এমনই দাবি করেছে। গ্রামীণ মহিলারাও চাইছেন নিজেদের স্বনির্ভর করে তুলতে। স্বাধীনভাবে নিজেদের ছোট ব্যবসা যেমন হস্ত শিল্প কুটির শিল্প ও কারিগরি শিল্পের মতো বিষয়গুলিকে নিয়ে ভবিষ্যতে এগিয়ে যেতে চাইছেন। আপনিও কি নিজেকে স্বনির্ভর করে তুলতে চাইছেন ? কিন্তু টাকার অভাবে নিজেকে স্বনির্ভর করার পথে এগিয়ে যেতে পারছেন না। এমনকি ছোট ব্যবসা করার পরিকল্পনাও করতে পারছেন না। বা নিজের ব্যবসাকে বাড়াতে পারছে না। কিন্তু এখন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ পরিকল্পনায় মহিলাদের স্বনির্ভর ও ক্ষমতায়নের জন্য প্রচুর প্রকল্প চালু হয়েছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক ৫ টি ঋণ যোজনা ও স্কিমের কথা । আর কেনই বা গ্রামীণ মহিলাদের মধ্যে ঋণ নেওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে আপনাদেরকে জানাবো এই ভিডিওতেই।
ঋণ নেওয়ার কারণ
গ্রামীন মহিলা সংখ্যা কত জানেন ? ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক ডেটা ২০২০ (World Bank Data (2020) কি বলছে। চলুন দেখা যাক। ভারতীয় জনসংখ্যার ৪৮ শতাংশ মহিলা গ্রামে বসবাস করে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ মহিলারা কৃষি কাজ করেন বা গৃহিণী। কিন্তু বর্তমানে গ্রামীণ মহিলারাও নিজেদেরকে স্বনির্ভর করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে উদ্যোগী হয়েছে। তারা স্বাধীনভাবে কৃষি কাজ সাথে যুক্ত হচ্ছেন। ৭৪.৮ শতাংশ মহিলা কৃষি শ্রমিক রয়েছে গ্রামীণ এলাকায়। মাশরুম ক্যাপসিকাম ও চিনা বাদামের মতো কিছু বাণিজ্যিক ফসল উৎপাদন করার চেষ্টা করছে। গ্রামীণ মহিলারা বিউটি পার্লার মেকআপ আর্টিস্ট , বিভিন্ন ধরনের গহনার তৈরীর ও চিকনকারি, শাড়ির সুতোর কাজের সাথেও যুক্ত হচ্ছেন। স্বনির্ভর করছেন নিজেদেরকে। এমনকি সংসারের হাল ধরতে, সন্তানদের পড়াশোনার ক্ষেত্রেও মহিলারা ঋণ নিয়ে নিজেদের স্বপ্নপূরণের কথা ভাবছে।
স্বনির্ভর গোষ্ঠী
আপনারা অনেকেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত আছেন বা ভবিষ্যতে হবেন। যা সাধারনত আমরা দল বলে জানি । দশ জন মহিলা একটি দল বানিয়ে নির্দিষ্ট নামে সরকারের কাছে রেজিস্টার করে । রাজ্য সরকার এই স্বনির্ভর গোষ্ঠী গুলিকে পরিচালনা করে থাকে। কোন অতিরিক্ত ঝামেলা ছাড়াই সহজেই মহিলারা সরকারের কাছে ঋণ নিয়ে নিজেদের বিভিন্ন কাজে লাগাতে থাকে । এখন অনেক গ্রামীণ মহিলা দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সহজেই ঋণ পাচ্ছেন ও নিজেদের স্বনির্ভর গড়ে তুলছেন। এর ফলে মহিলাদের মধ্যে ঋণ নেওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মহিলাদের স্বনির্ভর করতে ও তাদের রোজগারের পথ দেওয়ার জন্য সরকার বেশ কিছু প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও সার্ভে করছে। মহিলাদের বিভিন্ন কাজ করার জন্য উৎসাহ দিচ্ছে ।বিভিন্ন প্রকল্প মাধ্যমে তারা সহজেই ঋণ নিতে পারছে । আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই রকমই ৫ টি যোজনা ও স্কিমের বিষয়ে।
প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা
প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা। (MUDRA) (Micro Units Development & Refinancing Agency) মাইক্রো ইউনিটস ডেভেলপমেন্ট এন্ড রিফাইন্যান্সিং এজেন্সী যা আপনারা মুদ্রা নামে জেনে থাকেন । এটি মুদ্রা লোন ফর ওমেন নামেও পরিচিত। যে সমস্ত মহিলারা মাঝারি ও ছোট ব্যবসা বা স্টার্ট আপ খুলতে চাইছেন তারা প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা থেকে সহজেই ঋণ নিতে পারেন। এখানে আপনারা কম সুদের হারে ও দীর্ঘ মেয়াদে টাকা শোধ করতে পারবেন। শিশু, কিশোর ও তরুণ ঋণ নামে তিনটি ভাগ আছে। শিশুর ঋণে আপনি ৫০ হাজার টাকা, কিশোর ঋণে ৫০ হাজার টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা, আর তরুণ ঋণে পাঁচ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা আপনি ঋণ নিতে পারেন। শিশু এবং কিশোর ঋণে কোন সুদ দিতে হয় না। তরুন ঋণে ০.৫০ শতাংশ সুদ দিতে হয়। মহিলা উদ্যোক্তারা ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারেন । এমনকি এই যোজনায় সুদের মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়ানো যায়।
স্ত্রী শক্তি যোজনা
আপনারা সকলেই স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া বা এসবিআই এর নাম শুনেছেন। এই ব্যাঙ্ক মহিলা উন্নয়নের জন্য একটি বিশেষ যোজনা শুরু করেছে । এসবিআই এর স্ত্রী শক্তি যোজনার কথা আপনারা শুনে থাকবেন। এখানে সেল্ফ এমপ্লয়েড (self employed) মহিলারা এবং যেসব মহিলা নিজে থেকে ছোট ব্যবসা করে তাদের ৫ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে আপনিও ঋণ নিতে পারেন। এই যোজনার কিছু সুবিধা রয়েছে যা আপনাদের ঋণ নেওয়ার জন্য অনেকই সুবিধা দেবে। আসুন জেনে নিই। ৫ লক্ষ টাকা ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন নিরাপত্তা অর্থাৎ কোন জিনিস বন্ধক না রেখেই আপনি ঋণ নিতে পারেন। আপনি যদি ২ লক্ষ টাকার বেশি ঋণ নেন তাহলে ০.০৫ শতাংশ সুদের হারে ছাড় পাবেন। কিন্তু এই ঋণের ক্ষেত্রে দুটি জিনিস মাথায় রাখতে হবে তা হলো যারা ঋণ নেবেন তাদের ব্যবসায়ের অংশীদারিত্ব বা মালিক হতে হবে এবং তিনি যে ব্যবসাটা করছেন সেটা যেন রাজ্যের উন্নয়নের কাজে লাগে তা খেয়াল রাখতে হবে। আর এইসব ঋণ আপনি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার যে কোন শাখাতেই পেতে পারেন।
দেনা শক্তি স্কিম
এ রকমই আরেকটি প্রকল্প হল দেনা শক্তি স্কিম । মহিলা উদ্যোগপতি যারা চাষবাস ম্যানুফ্যাকচারিং, ছোট শিল্প তৈরীর সাথে যুক্ত তারা এই প্রকল্প থেকে ঋণ নিতে পারেন। ব্যবসায়িক ঋণের ক্ষেত্রে মাঝারি ও ছোট ব্যবসায়ী মহিলারা ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেন। সুদের হারে ০.২৫ শতাংশ ছাড়ে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারেন । এমনকি মহিলা উদ্যোক্তারা ক্ষুদ্র ঋণ বিভাগ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন। প্রথমে দেনা ব্যাঙ্ক থেকে এই ঋণ পাওয়া যেত, পরে ব্যাঙ্ক অফ বরোদার সাথে দেনা ব্যাঙ্ক যুক্ত হওয়। এখন আপনি ব্যাঙ্ক অফ বরোদা থেকে এই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেন।
মহিলা উদ্যম নিধি যোজনা
আপনারা আরেকটি যোজনার নাম শুনেছেন বা শুনে থাকবেন সেটি হলো মহিলা উদ্যম নিধি যোজনা । যেসব মহিলারা একটু বড় ব্যবসা করতে চান যেমন বিউটি পার্লার দোকান বা ডে কেয়ার সেন্টার, ব্যবসার কাজের জন্য গাড়ি কিনতে চাইলে আপনার জন্য এই যোজনাটি একদম সঠিক । পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক এবং ভারতের ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন ব্যাঙ্ক মহিলা উদ্যম নিধি যোজনার ঋণ দিয়ে থাকে। মহিলা উদ্যোক্তাদের এই যোজনার সাহায্যে ৫০ হাজার থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দশ বছরের মেয়াদে সহজ শর্তে ঋণ পেতে পারেন। কিন্তু দশ বছর ঋণ শোধের ক্ষেত্রে বাজারের হারের ওপর নির্ভর করে সুদ দিতে হয়।
অন্নপূর্ণা স্কিম
মহিলা ব্যবসায়ীদের ঋণ নেওয়ার আরেকটি ভালো স্কিম হল অন্নপূর্ণা স্কিম । এই প্রকল্পে মহিলা ব্যবসায়ীরা বা উদ্যোক্তারা ৫০ হাজার টাকা লোন পেতে পারেন কোন কিছু বন্ধক না রেখেই। এই ঋণ প্রকল্পটি ক্যাটারিং ব্যবসা এবং কৃষি ক্ষেত্রে বেশি উপযুক্ত বলেই মনে করা হয়। এখানে সাধারণত চাষের নানান যন্ত্রপাতি কিনতে সাহায্য করা হয় । ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ৩৬ মাস। এমনকি প্রথম মাসে ঋণ গ্রহীতাদের কিছু শোধ দিতে হয় না। আপনারা স্টেট ব্যাঙ্ক অফ মহীশূর অথবা ভারতীয় মহিলা ব্যাঙ্কগুলির সাথে যোগাযোগ করলে এই ঋণ পেতে পারেন।
এই পাঁচটি প্রকল্প ছাড়াও , সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাঙ্ক অনেক স্কিম চালু করেছে মহিলাদের ঋণ দেওয়ার জন্য। ভারতীয় মহিলা ব্যাঙ্ক বিজনেস লোন, ওরিয়েন্ট মহিলা বিকাশ যোজনা স্কিম, সেন্ট কল্যাণী স্কিম ও উদ্যোগিনী স্কিম, সিন্ড মহিলা শক্তি স্কিম। এই সব স্কিমে আপনারা ঋণের আবেদন করতে পারেন। পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণের সুবিধা নিতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গ রাজস্থান এবং বিহারে মহিলাদের ঋণ গ্রহণের সংখ্যা সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ৯৯ শতাংশ গ্রামীণ পরিবারের প্রধান পুরুষ । মহিলারাও পুরুষদের পাশাপাশি সমান তালে নিজেদেরকে স্বনির্ভর করে পরিবারের দায়িত্ব নিতে ঋণ নিচ্ছেন ও তা শোধ করছেন। গ্রামীণ মহিলাদের যত বিকাশ হবে ততই ভারতের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো ও অগ্রগতি বিকাশ হবে ।