আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগেই ১১ই মার্চ চালু হল সিএএ। ২০২৪ সালে সিএএ আইন পাশ হয়ে গেলেও, অতিমারী করোনার জন্য সে আইন বর্ধিত করে অবশেষে চার বছর পর সোমবার গোটা দেশে চালু হয়ে গেল বহু বিতর্কিত আইনটি। সরকারের ই-গেজেট ওয়েবসাইটেই প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞপ্তিটি। কারা, কী ভাবে অনলাইনে সিএএ-তে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন, সেই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জানানো হয়েছে এই ওয়েবসাইটে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দেওয়া বিবৃতিতেও একথা উল্লেখ রয়েছে। মঙ্গলবার থেকেই সিএএ (CAA) অনলাইন পোর্টালে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যাবে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। সোমবার দুপুরে সিএএ কার্যকরের বিজ্ঞপ্তি জারির খবর প্রকাশ হতেই তোলপাড় দেশ। এর পর সিএএ বিজ্ঞপ্তি জারির হতেই হঠাৎ করে ই-গেজেট ওয়েবসাইট ক্র্যাশ হয়ে যায়।
সিএএ-তে প্রথমবার ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব প্রদানের কথা বলা হয়েছে। কেন্দ্রের বক্তব্য, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোতে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে পালিয়ে আসা সংখ্যালঘুরদের ( হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ও পার্শি) ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে সাহায্য করবে। তবে বিরোধীদের দাবি, এই আইন মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যমূলক এবং সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির লঙ্ঘন।
সংসদে বিল পাসের পরপরই তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের স্বাক্ষরে আইন হয়ে গিয়েছিল। প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে সিএএ-র ধারা-উপধারা যুক্ত হয়নি। ফলে বাস্তবে এই আইন কার্যকরও হয়নি। জানা গিয়েছে, নাগরিকত্বের জন্য আবেদন অনলাইনের মাধ্যমে করা যাবে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এর জন্য নির্দিষ্ট পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে। আর সেই ‘সিএএ পোর্টালে’-র মাধ্যমেই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যাবে। পোর্টালটি হল- indiancitizenshiponline.nic.in. আবেদনকারীকে প্রথমে এই পোর্টালে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। বেশ কিছু নথি আপলোড করতে হবে এখানে। এর পর কবে ভারতে এসেছিলেন, কেন এসেছিলেন এই সংক্রান্ত তথ্য দিতে হবে। মোবাইল নম্বর দিতে হবে। আর তাতে একটি ওটিপি আসবে। এর পর সেই সমস্ত তথ্য আপলোড করতে হবে। সরকারিভাবে সমস্ত তথ্য যাচাই করা হবে। সমস্ত কিছু যদি সঠিক হয় তা হলেই নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে।
সিএএ পোর্টালে কী কী নথি জমা দিতে হবে? জানা গিয়েছে, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের পাসপোর্ট, জন্ম শংসাপত্র বা স্কুলের সার্টিফিকেট, জমির কাগজ, ভোটার কার্ড, জাতীয় পরিচয় পত্র বা রেসিডেন্সিয়াল পারমিট নাগরিকত্ব আবেদনের জন্য গ্রাহ্য হবে। ভারতে থাকাকালীন এখানকার স্কুল বা কলেজের সার্টিফিকেট, বার্থ সার্টিফিকেটও বৈধ নথি বলে গণ্য করা হবে। তবে যে নথিগুলো জমা দেওয়া হবে তা যেন বৈধ এবং নির্ভুল হয়। পরিচয়পত্র-সহ অন্যান্য নথিতে যদি কোনও ভুল থাকে তা হলে আবেদনের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।
বিজ্ঞপ্তি অনুসারে নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদনকারীদের দুটি বিশেষ নথি জমা দিতে হবে। একজন ভারতীয় নাগরিককে হলফনামার মাধ্যমে আবেদনকারীর চরিত্র সম্পর্কে সাক্ষ্য দিতে হবে। আবেদনকারীর অবশ্যই সংবিধানের অষ্টম তফসিলে তালিকাভুক্ত যে কোনও একটি ভাষার পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হবে। তৃতীয় তফসিলের বিধানের অধীনে প্রাকৃতিককরণের যোগ্যতা পূরণ করে নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য একজন ব্যক্তির কাছ থেকে আবেদনটি ৮এ ফর্মে জমা দেওয়া হয় যার মধ্যে রয়েছে-আবেদনকারীর চরিত্রের সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ভারতীয় নাগরিকের কাছ থেকে একটি হলফনামা-সহ আবেদনে দেওয়া বিবৃতিগুলোর সত্যতা যাচাই করে একটি হলফনামা। আবেদনকারীর একটি ঘোষণা যে, তার সংবিধানের অষ্টম তফসিলে উল্লিখিত ভাষার একটির পর্যাপ্ত জ্ঞান রয়েছে। নিয়মে বলা হয়েছে, যারা ওই ভাষায় কথা বলতে বা পড়তে বা লিখতে পারে তাদের পর্যাপ্ত জ্ঞান আছে বলে বিবেচিত হবে। আবেদন অনুমোদিত হওয়ার ক্ষেত্রে অন্য দেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করা হবে।