স্পেশাল রিপোর্ট ওয়েব ডেক্স , ফিনান্সিয়াল ক্যাপিটাল অফ ইন্ডিয়া বললে নিশ্চয়ই মুম্বাই বলবেন। কিন্তু আপনারা কি জানেন ? উনিশ শতকে ভারতের ফিন্যান্সিয়াল ক্যাপিটাল ছিল কলকাতা। হ্যাঁ, ঠিক শুনেছে। কলকাতায় ছিল সেই সময়ের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য নগরী। বিভিন্ন বৈদেশিক শক্তি কলকাতা বন্দরে বাণিজ্য করতে আসত। সেই সময়ে বোম্বে বন্দর, কোচি বন্দরের থেকে বেশি বিখ্যাত ছিল কলকাতা বন্দর। কলকাতা ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, ব্যাঙ্কিং, পরিষেবা বিভিন্ন দিক থেকে ভারতের সেরা শহর ছিল।
প্রায় ৪৫০ বছর আগে মুঘল সম্রাট আকবর, নবাব সিরাজউদ্দৌলা থেকে ডাচ্, ওলন্দাজ, ফরাসি, পর্তুগিজ কলকাতায় এসে নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করে। ১৭৭২ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস, ব্রিটিশদের রাজধানী প্রতিষ্ঠা করে কলকাতায়। এরপর থেকে এখানে অনেক ফ্যাক্টরি, ব্যাঙ্ক গড়ে তোলা হয়। স্টক এক্সচেঞ্জ আর ট্রেডের কাজও শুরু হয়। ব্রিটিশ আসার পর কলকাতা আরো শক্তিশালী ট্রেডিং হাবে পরিণত হয়।
১৮০৮ সালে কলকাতায় প্রথম জয়েন্ট স্টক ব্যাঙ্ক আর ব্যাঙ্ক অফ বেঙ্গল প্রতিষ্ঠা হয়। ১৮৯৫ সালে ব্যাঙ্ক অফ বেঙ্গল এর ভ্যালু ছিল ১৮৪ লক্ষ টাকা, যা ব্যাঙ্ক অফ বোম্বের থেকে দ্বিগুণেরও বেশি। এমনকি ১৮৩০ সালে কলকাতা ট্রেডস অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করা হয়।
শুধুই কি ব্রিটিশ ! ব্যাবসার দিকে কলকাতার বাঙালি ব্যাবসায়ীরা কম যায়ে কিসে। বাঙ্গালিদেরকে ব্যাবসা বিমুখ বললেও কলকাতার প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, রাজা সুবোধচন্দ্র মল্লিক, রামদুলাল দে ছিলেন বিখ্যাত সব বিজনেস টাইকুন। সুতানুটি, কালিকা, গোবিন্দপুর ছিল প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র। হুগলি, হলদিয়া নদী দিয়ে বাণিজ্যও করা হতো ।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে কলকাতা পিছিয়ে পড়ল। ১৯১১ সালে ব্রিটিশ কলকাতা থেকে রাজধানী বদল করল দিল্লিতে। এরপর ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ১৯৪৩ এ দুর্ভিক্ষের জন্য কলকাতা ফিন্যান্সিয়াল ক্যাপিটালের তকমা হারালো।
ফিনান্সিয়াল ক্যাপিটাল না হলেও কলকাতাকে এখনো পর্যন্ত সিটি অফ জয়, সিটি অফ প্যালেস বলা হয়। ব্রিটিশদের সময়ে এখানে অনেক বড় বড় রাজপ্রাসাদ, স্কুল , কলেজ তৈরি করেন তাই একে সেটি অফ প্যালেস বলা হয়। এখনো কলকাতার বেশিরভাগ সরকারি ভবন ব্রিটিশদের তৈরি করা জায়গাতেই রয়েছে।