স্পেশাল রিপোর্ট ওয়েব ডেক্স, আজ বুদ্ধপূর্ণিমা । গৌতম বুদ্ধের জন্মদিন হিসেবেই এই তিথি। গৌতম বুদ্ধ ধ্যান, জ্ঞান, আধ্যাত্মিকতার মধ্যে দিয়ে বুদ্ধির উজ্জ্বল দীপ্তির প্রকাশ ঘটান। জীবন, কর্ম, ধর্মের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি আধ্যাত্মিকতা ও বুদ্ধি দিয়ে অতি সাধারণ ভাবে সুখ ও দুঃখের মধ্যে দিয়ে কাটানো যায়। তাই আজ এই বিশেষ দিন বুদ্ধি ও বৌদ্ধের দিন।
বৌদ্ধ ধর্ম । পৃথিবীর অন্যতম প্রধান এই ধর্ম মহাপুরুষ গৌতম বুদ্ধ প্রচলন করেন । বলা হয় খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ ও চতুর্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে প্রাচীন ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের উৎপত্তি হয়। সকলেরই কিছু দুঃখ রয়েছে, সেই সব দুঃখের কারণ ও নিবারণের উপায় নিয়েই বৌদ্ধ ধর্ম। জ্ঞান মোক্ষলাভ পরজন্ম ও নানান অজানা তথ্য লুকিয়ে রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মে । আসুন জেনে নেওয়া যাক সিদ্ধার্থ কিভাবে হলেন গৌতম বুদ্ধ ? বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস কি বলছে ? বৌদ্ধ ধর্মের উৎপত্তি বা কিভাবে হলো ? মহান ধর্ম হওয়ার সত্বেও বৌদ্ধ ধর্মের মানুষের সংখ্যা কম কেন ? আর বলবো পরজন্ম ও সাত স্বর্গ নিয়ে গৌতম বুদ্ধ কি বলেছেন ।
গৌতম বুদ্ধের জীবন
বৌদ্ধ ধর্মে গৌতম বুদ্ধকেই মহাপ্রভু হিসেবে সাধনা করা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৩ অব্দে নেপালের লুম্বিনি /লুম্বিনীতে রাজকুমার সিদ্ধার্থ হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন গৌতম বুদ্ধ । শাক্য বংশের রাজা শুদ্ধোদনের পুএ ছিলেন তিনি। কিন্তু জন্মের সপ্তম দিনে সিদ্ধার্থের মা মায়াদেবী মারা যান। সিদ্ধার্থকে সংসারী করার জন্য তাকে বিয়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু তার সংসারে মন ছিল না । পুরান মতে রাজকুমার সিদ্ধার্থ নগর ভ্রমণে গিয়ে চার ব্যক্তির সাথে দেখা হয় । প্রথম দিনে বৃদ্ধ ব্যক্তি দ্বিতীয় দিনে অসুস্থ একজন মানুষ , তৃতীয় দিনে মৃত ব্যক্তি এবং চতুর্থ দিনে একজন সন্ন্যাসীকে প্রশ্ন করে জানতে পারেন এ জগত দুঃখময়। এরপরই সিদ্ধার্থ ২৯ বছর বয়সে গৃহত্যাগ করেন। দীর্ঘ ছয় বছর কঠোর সাধনা করে বুদ্ধ গয়ার বোধিবৃক্ষের নীচে বুদ্ধত্বজ্ঞান লাভ করেন। তারপর তিনি হয়ে ওঠেন গৌতম বুদ্ধ।
বৌদ্ধ ধর্মের উৎপত্তি
গৌতম বুদ্ধ বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে বুদ্ধরূপে আবির্ভূত হন। এই ধর্মের প্রথম প্রচার শুরু হয় বারানসীর সারনাথের মৃগবনে তার পাঁচ জন সহচরকে নিয়ে। বুদ্ধের দ্বারা প্রথম দীক্ষিত পাঁচজন শিষ্য বপ্প ভদ্দিয়, মহানাম অশ্বজিৎ ও কৌণ্ডণ্যকে পঞ্চবর্গীয় শিষ্য রূপে ডাকা হতো। চার আর্যসত্য / চতুরার্য সত্য ও অষ্টাঙ্গিক মার্গের মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার শুরু হয়। গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুর পর অনুগামীরা তার জীবনকথা ও শিক্ষা মুখে প্রচার করত। প্রায় ৪০০ বছর পর এগুলিকে লিপিবদ্ধ করে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার শুরু হয়। পাকিস্তান আফগানিস্তান, উজবেকিস্তান তুর্কমেনিস্তান তাজিকিস্তান ইরান, চীন জাপান ও তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্ম ছড়িয়ে পড়ে ।
ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার
ভারতে বৌদ্ধ ধর্ম প্রসার লাভ করে সম্রাট অশোকের সময়। কলিঙ্গ যুদ্ধের পর অহিংসা ত্যাগ করে সম্রাট অশোক বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন। এই ধর্ম প্রচার করার জন্য তিনি নানান দেশে দূত পাঠান। সম্রাট অশোক ভারতের বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারের জন্য সাঁচি স্তূপ মহাবোধি মন্দির, ধামেক / ধামেখ স্তূপ ও নালন্দা মহাবিহার নির্মাণ করেন। কুষাণ সাম্রাজ্য , পাল ও সেন যুগেও ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের বিকাশ ঘটে। বিহার ছিল বৌদ্ধ ধর্মের প্রধান স্থান।
পরকাল ও সাত স্বর্গ
আপনাদের সবার মধ্যেই পরকাল ও স্বর্গ লাভ নিয়ে অনেক প্রশ্নই থাকে, আদৌ কি স্বর্গ আছে ? আসুন জেনে নেওয়া যাক গৌতম বুদ্ধ কি বলেছেন। মানুষের পরকাল নির্ভর করে মানুষের ইহকালের কর্মের উপর। ইহকালে যা কর্ম করবে সেই অনুযায়ী পরকালে ফল পাবে। আর মানুষের কর্মই তাকে স্বর্গের পথে চালনা করবে। সাত রকমের স্বর্গের কথা গৌতম বুদ্ধ বলেছেন। মনুষ্যলোক চতুর্মহারাজিক স্বর্গ তাবতিংশ স্বর্গ যাম স্বর্গ, তুষিত স্বর্গ নির্মানরতি স্বর্গ এবং পরনির্মিত বসবতি স্বর্গ। কর্মের উপর নির্ভর করে মানুষ পরকালে ৩১ টি লোকভূমির মধ্যে যেকোনো একটিতে জন্মগ্রহণ করে।
ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের সংখ্যা কম
বৌদ্ধ ধর্মে পরকাল স্বর্গ জ্ঞান বিভিন্ন বিষয়ে মাহাত্ম্য থাকলেও ভারতে বৌদ্ধদের সংখ্যা অনেকেই কম। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী মাত্র ৮৪ লক্ষ এই ধর্মের মানুষ বসবাস করে। মুঘল ও সুলতানরা ভারত দখলের পর বৌদ্ধ ধর্মের অনেক স্থাপত্যয় নষ্ট করে। শক ও হুনদের আক্রমণে বৌদ্ধ ধর্মের মহাত্ম্য নষ্ট হয় । হিন্দু ধর্মের জনপ্রিয়তার কারণেও বৌদ্ধ ধর্মের মানুষের সংখ্যা অনেকটাই কমে যায়। বহু বৌদ্ধ সন্ন্যাসীকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়। ফলেই ধীরে ধীরে বৌদ্ধদের সংখ্যা কমে যায়।
বৈশাখী পূর্ণিমাতে গৌতম বুদ্ধের জন্ম হয় ও মহাপরিনির্বাণ লাভ করেছিলেন। তাই বৈশাখী পূর্ণিমাতে মহাসমায়ারে বুদ্ধ পূর্ণিমা পালন করা হয়। বুদ্ধ ধর্মকে বাঁচানোর জন্য মহাবোধি সোসাইটি, বিপাসনা আন্দোলন, বৌদ্ধ মন্দির ও বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। বৌদ্ধদের ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটকে গৌতম বুদ্ধের জীবন দর্শন বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। আপনারাও বৌদ্ধ ধর্মকে আরো ভালোভাবে জানতে ঘুরে দেখতে পারেন ভারতের বিভিন্ন বৌদ্ধ স্তূপ ও মন্দিরগুলি।
জীবনে প্রতিটি চলার পথে প্রতিমুহূর্তে এবং সব পরিস্থিতিতে নিজের বুদ্ধি, বিবেচনা, বিচার বোধ দিয়ে তার সম্মুখীন হওয়া এবং সফলতা অর্জন করায় বৌদ্ধ ধর্ম শেখায়। অলৌকিক অবাস্তব কোন কিছুই জীবনের অংশ হতে পারে না তা বোঝায় এই ধর্ম। তাই গৌতম বুদ্ধের জীবন জীবনী এক নতুন দিশার সঞ্চার করে। গৌতম বুদ্ধ আসলেই বুদ্ধির বুদ্ধ।