স্পেশাল রিপোর্ট, ডেস্ক: হিন্দু ধর্মানুসারে ছট পূজা হল মূলত সূর্য দেবের পূজা। ছট পূজা ভারতের উত্তর প্রদেশ, বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের কিছু অংশে সাড়ম্বরে উদযাপন করা হয়। তবে ছট পূজার আধিক্যতা বিহার রাজ্যের মানুষদের মধ্যেই সর্বাধিক। তাই ছট পূজাকে বিহারীদের উৎসব বলা হয়। ছট পূজা হল সূর্য এবং তার স্ত্রী উষা দেবীর পূজা। তবে ছট পূজার মধ্যে দিয়ে মূলত সূর্য দেবের উপাসনা করা হয়। প্রতিবছর কার্তিক মাসের শুক্ল তিথিতে চতুর্দশীর দিন থেকে সপ্তমী পর্যন্ত মোট চার দিন ধরে ছট পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া চৈত্র মাসে একই নিয়মে আরো একবার ছট পূজা হয়। কার্তিক মাসের ছট পূজাকে কার্তিক ছট এবং চৈত্র মাসের ছট পূজাকে চৈতি ছট বলা হয়। ছট পূজার প্রথম দিন ব্রতীরা শুদ্ধ বস্ত্রে ছট পূজার জন্য ব্রতী হয় এবং সেই দিন লবন ছাড়াই ছোলার ডাল, মিষ্টি কুমড়ো দিয়ে ভাত রান্না করে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে প্রসাদ হিসাবে গ্রহণ করে। ছট পূজার দ্বিতীয় দিন অথাৎ পঞ্চমীর দিন হল খরনা ব্রত পালনের দিন। এই দিন থেকেই ছট পূজার নির্জলা ৩৬ ঘন্টার উপোস শুরু হয়। এই দিন ছট ব্রতী মহিলারা কাঠের আঁচে মাটির উনুনে গুড়ের পায়েস রান্না করে আহার করন এবং পরে ছট পূজা এবং ঠেকুয়া, নাড়ু ইত্যাদি প্রসাদ তৈরী করেন। ছট পূজার তৃতীয় দিন হল ষষ্ঠীর দিন। এই দিনে ছট ব্রতী মহিলারা সূর্যাস্তের সময় ডুবিত সূর্যকে গঙ্গা ঘাটে কিংবা বড় জলাশয়ে ধারে ধামা ভর্তি করে গোটা আখ গাছ, হলুদ গাছ এছাড়া পুজোর বিভিন্ন উপাদেয় সামগ্রী নিয়ে গিয়ে সূর্য দেবের উদ্দেশ্যে অর্ঘ্য নিবেদন করেন। ছট পূজার চতুর্থ দিন হল সপ্তমীর দিন। এই দিন সকাল বেলা সূর্যোদয়ের সময় ছট ব্রতী মহিলারা তাদের পরিবারের সঙ্গে ছট ঘাটে গিয়ে সূর্যদেবকে অর্ঘ্য নিবেদন করে ছট উপবাস ভঙ্গ করে। দুর্গাপূজা যেমন বাঙালী অবাঙালী এক সার্ব্বজনীন উৎসবে পরিনত হয়েছে, তেমনি ছটপূজাও বর্তমানে শুধুমাত্র বিহারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বহু বাঙালী তথা অন্য ধর্মের মানুষও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই পুজায় অংশ গ্রহণ করে থাকেন। ছটপুজা কলকাতার বাবুঘাটে অত্যন্ত নজরকাড়া এবং উপছে পড়া ভিড় হতে দেখা যায়। তাছাড়া নৈহাটি, হাওড়া অঞ্চল, হুগলীতেও ব্যাপক ভাবে দেখা যায়। সোদপুরের বারোমন্দির ঘাটেও ছটপুজার ভিড় চোখে পড়ার মত। প্রশাসনিক সহায়তার সঙ্গে অত্যন্ত সুসজ্জিতভাবে অনুষ্ঠিত হয়। ছটপুজা অত্যন্ত কঠিন, এই পূজায় থাকে কঠিন ব্রত, মনস্কামনা পূরণের জন্য ভক্ত নির্জালা উপবাস করেন। গঙ্গারঘাটে পোঁছানোর সময় ডন্ডি কাটতে কাটতে যেতে হয়। এখানে অত্যন্ত ভক্তিভরে ছট মায়ের উপাসনা এবং পূজা করতে হয়। ছট পুজার অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এলাকার মেলা বসে। ছোট-বড়, বাঙালী অবাঙালী একত্রিত হয়ে অনুষ্ঠিত হয় এই ছটপূজা।